hi

Header Ads

"খালেদ নানা মিথ্যা কথা বলে মানুষকে হাসায়"

 "খালেদ নানা মিথ্যা কথা বলে মানুষকে হাসায়" এটা কখনো কোরআন-হাদিস গ্রহণ করে না। বরং এটি শরীয়ত পরিপন্থী একটি কাজ। কারণ কোরআন-হাদিসের স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে মিথ্যা কথা বলা যাবে না। চাই সেটা হাসানাের জন্য হােক আর এমনিতেই হােক। তাই খালেদের কাজ সম্পর্কে পাঠ্যপুস্তক এর আলোকে কুরআন হাদিস কি বলে, নিচে এর সম্যক আলোচনা করা হলো:

বন্ধুর আড্ডা, সহকর্মীদের ছােট্ট বৈঠকি কিংবা সন্ধ্যার চা-চক্র জমিয়ে তুলতে মানুষ কত কিছুই না করে। হাসিঠাট্টা, কৌতুক ও | মধুর বিদ্রুপ কোনাে কিছুই বাদ যায় না সেখানে। অবতারণা করা হয়। নানা রকম রসাত্মক ঘটনা ও উপমার। এসব ঘটনা ও উপমা যেমন হয় সত্যাশ্রয়ী ও শিক্ষণীয়, তেমনি হয় উদ্ভট, বানােয়াট ও মিথ্যা। সাধারণত আড্ডা-বৈঠকির রসাত্মক মিথ্যাগুলােকে মিথ্যা মনে করা হয় না, বরং কেউ দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বলা হয় এগুলো নির্দোষ মিথ্যা। এতে পাপ নেই। আসলে কি মিথ্যা কখনো নির্দোষ হয়? ইসলাম কি কখনাে সচেতনভাবে মিথ্যা বলার অনুমতি দেয়? যদি দিয়েই থাকে, তবে তার শর্ত কী?


সত্যের বিপরীত রূপই মিথ্যা। যে কথা ও কাজ মানুষকে সঠিক উদ্দেশ্য নির্দেশ না করে ভুলপথে পরিচালিত করে, বিভ্রান্ত করে, তা-ই মিথ্যা। ইসলামে সাধারণভাবে কথা ও কাজে যেকোনাে ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ولكم عذاب اليم. بما كانوا يكذبون.


'মিথ্যা বলার কারণে তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১০) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, 'এবং তোমরা মিথ্যা কথা পরিহার করাে।' (সুরা : হজ, আয়াত : ৩০)

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وإياكم والكذب فإن الكذب يهدي إلى الفجور وإن الفجور يهدي إلى النار .


‘তােমরা মিথ্যা পরিহার করাে। কেননা মিথ্যা পাপের পথে পরিচালিত করে। আর পাপ মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছে দেয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭১)


আলােচ্য আয়াত ও হাদিসে মিথ্যার কোনাে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়নি বরং সব ধরনের মিথ্যা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। কারণ মিথ্যা মানুষকে বিপথগামী করে।


আমাদের সমাজে সাধারণত সেসব মিথ্যাকে দূষণীয় মনে করা হয়, যা অসৎ উদ্দেশ্যে বলা হয়। আর হাসিঠাট্টা ও কৌতুকের ছলে যা বলা হয়, তাকে হয়তাে মিথ্যাই মনে করা হয় না। অথবা মনে করা হয়, তা নির্দোষ মিথ্যা। অথচ ইসলামে মিথ্যার কোনাে শ্রেণি নেই। মিথ্যা যে উদ্দেশ্যেই বলা হােক সৎ বা অসৎ এবং সচেতনভাবে বা কৌতুক করে কোনােভাবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন,


ইচ্ছা বা কৌতুক কোনােভাবেই মিথ্যা গ্রহণযোগ্য হয় না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৬)


সমাজের একটি সাধারণ প্রবণতা হলাে, মা-বাবা ও গুরুজন শিশুকে নানা আশ্বাস ও প্রলােভন দেখান, অঙ্গীকার করেন যেন তারা গুরুজনের কথা শােনে। অথচ এসব অঙ্গীকার না কখনাে পূরণ করা হয় এবং না কখনাে তা পূরণের প্রয়ােজনবােধ করা হয়। এমনকি


তারা মনেও রাখেন না কবে কী অঙ্গীকার করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন আশ্বাসকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। কারণ এমন কাজে যেমন শিশুর মনে অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব হ্রাস পায়, তেমন তারা আস্থা ও শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে


গুরুজনের ওপর থেকে। ফলে সাময়িক কিছু সুফল পাওয়া গেলেও শিশুর মানসিক বিকাশে তা স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করে।


রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি কোনাে শিশুকে ডাকল, এদিকে এসাে! (কিছু দেওয়ার জন্য) অতঃপর তা দিল না, তবে তা মিথ্যা।' (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৯৮৩৬)


একইভাবে নির্দোষ মনে করে মিথ্যা বলা হয় আড্ডা ও বৈঠকিগুলােতে। হাস্যরসের জন্য দেওয়া হয় মিথ্যা উপমা। হাদিস শরিফে এমন মিথ্যার ব্যাপারেও কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে। রাসুল (সা.) বলেন, قال رسول الله صلى الله عليه وسلمويل الذي يحدث فيكذب ليضحك به القوم، ويل له ويل له


অভিশাপ তাদের জন্য যারা কথা বলে এবং মানুষ হাসানাের জন্য মিথ্যা বলে। তার জন্য অভিশাপ! তার জন্য অভিশাপ!!' (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৯০)


অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, قال رسول الله صلى الله عليه وسلموببيت في وسط الجلة لمن ترك الكذب


وإن كان مازحا وببيت في أعلى الجنة لمن خشن


আমি তার জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করব যে মিথ্যা পরিহার করবে, এমনকি হাসির ছলে বলাটাও।' (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ৪৮০০)


এ হাদিসের ব্যাখ্যায় আল্লামা সানআনি (রহ.) বলেন, এ হাদিস প্রমাণ করে, মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলা হারাম। এটি বিশেষ ধারার নিষেধাজ্ঞা। শ্রোতার জন্যও তা শোনা হারাম যদি তারা বুঝতে পারে মিথ্যা বলা হচ্ছে। কেননা তা শোনা মিথ্যারই স্বীকৃতি, বরং তার দায়িত্ব হলাে প্রতিবাদ করা এবং আড্ডা পরিহার করা।


(মুহাম্মদ বিন ইসমাইল আস-সানআনি, সুবুলুস-সালাম : ২/৬৮৩)


সুতরাং হাসির ছলেও মিথ্যা পরিহার করা আবশ্যক।


তবে হ্যা, জ্ঞানচর্চার প্রয়ােজনে যে উপমা সৃষ্টি করতে হয়, তা নিষিদ্ধ নয়। শর্ত হলাে, তা নির্দিষ্ট কোনাে ব্যক্তিকে চিহ্নিত করবে না, বরং তা অজ্ঞাতভাবে একটি শ্রেণি ও তার বৈশিষ্ট্য বোঝাবে। পবিত্র কোরআনে এমন একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে এবং তা প্রদানের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,


واضرب لهم مثلا رجلين جعلنا لاحدهما جنتين من اعناب وحففنهما بنخل وجعلنا بينهما زرعا


তাদের জন্য দৃষ্টান্ত দিন দুই ব্যক্তির, যাদের একজনকে দিয়েছিলাম দুটি আঙুরবাগান।' (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৩২)


আল্লামা ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) অধিক পরিমাণে এমন দৃষ্টান্ত প্রদানেও নিরুৎসাহ করেছেন, যেন মানুষ তার অজান্তে ভিত্তিহীন বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে না যায়। তিনি জ্ঞানচর্চায় কল্পচিত্রের


পরিবর্তে বাস্তবচিত্র ব্যবহারে উৎসাহিত করেছেন।


| কিছু মিথ্যাকে নির্দোষ প্রমাণে বিশেষভাবে একটি হাদিস উদ্ধৃত হয়। হাদিসে পাকে রয়েছে। قال رسول ال له صلى الله عليه وسلم " لا يجل الكذب إلا في ثلاث يحدث = الرجل امرأته ليرضيها والكذب في الحزب والكذب ليصلح بين الناس


তিনটি ব্যাপার ব্যতীত মিথ্যা বলা বৈধ নয়। তা হলাে, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে স্বামীর বলা। যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যা বলা। মানুষের মাঝে সম্প্রীতি তৈরি করতে মিথ্যা বলা।' (সুনানে তিরমিজি, হাদিস :


১৯৩৯)


এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববি (রহ.) বলেন, 'এ হাদিস দ্বারা (বিশেষ প্রয়োজনে) মিথ্যা বলার অবকাশ রয়েছে ঠিক, তবে তা কৌশলে সীমাবদ্ধ রাখা উত্তম।' আর ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জারির তাবারি (রহ.) বলেন, "যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যা বৈধ হওয়ার অর্থ হলাে কৌশল' অবলম্বন করা বৈধ। কেননা প্রকৃত মিথ্যা বৈধ হয় না।” (আবুল ফজল জাইনুদ্দিন আবদুর রহিম ইরাকি, তরহুত-তাসরিব ফি শরহিত-তাকরিব; ৭/২১৫)


লক্ষণীয় হলাে, হাদিসে অবকাশ দেওয়া হলেও তাকে 'মিথ্যা'ই বলা হয়েছে। সত্যের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। আর মুহাদ্দিসগণ তার ব্যাখ্যায় বলেছেন কৌশল অবলম্বন করার কথা। সুতরাং বুঝা গেল খালিদের কাজটি পাঠ্য পুস্তকের আলোকে কখনো গ্রহণীয় নয়।

No comments

Thanks for your message ❤️

Powered by Blogger.